নিহতদের দাহক্রিয়া সম্পন্ন: চলছে যৌথবাহিনীর অভিযান
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খাগড়াছড়ির স্বনির্ভর ও পেরাছড়া এলাকায় শনিবার সন্ত্রাসী হামলা ও ব্রাশ ফায়ারে ৭ জনের মৃত্যুর ঘটনায় এখনো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতংক বিরাজ করছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। স্বনির্ভর বাজারের দোকানপাট আজও বন্ধ রয়েছে। তবে, বন্ধ থাকা খাগড়াছড়ি-পানছড়ি সড়কে রবিবার সকাল থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থতি উত্তরনে কাজ শুরু করেছে। জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত টীম ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
এদিকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের ধরতে সেনা, পুলিশ ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথবাহিনীর সপ্তাহব্যাপী অভিযান শুরু হয়েছে। সন্ত্রাসী হামলার ও প্রাণহানির ঘটনায় এখনো কোন মামলা হয়নি। পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ভারপ্রাপ্ত জেলা সভাপতি তপন চাকমাসহ ৭ জনের মৃত্যুর প্রতিবাদে আজ সোমবার খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় আধা বেলা সড়ক অবরোধ ডেকেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিকযুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশনসহ তিনটি সংগঠন।
সন্ত্রাসী ঘটনায় নিহত ৭জনের মধ্যে ৪জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ি সংগঠনগুলোর তিন নেতার লাশ নিতে পরিবারের কেউ থানায় না আসায় রবিবার বিকেলে পুলিশ প্রহরায় দক্ষিন খবংপুড়িয়াা চেঙ্গী নদীর পাড়ে পৌছিয়ে দেয়া হয়। সেখানে পরিবারের সদস্য ও দলীয় লোকজন মরদেহ গ্রহন করে চেঙ্গী ওপারে নিয়ে স্থানীয় স্বশানে দাহক্রিয়া সম্পন্ন করে। মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য সহকারী জিতায়ন চাকমা ও এইচ এস সি পরীক্ষার্থী রুপম চাকমার মরদেহ খবংপুড়িয়া শ্বশানে, প্রকৌশলী ধীরাজ চাকমার মরদেহ পানছড়িতে এবং বৃদ্ধ শন কুমার চাকমার চাকমার মরদেহ পেরাছড়া এলাকায় দাহ করা হয়।
পুলিশ সুপার আলী আহম্মদ খান জানান, যৌথ অভিযানে অবৈধ অস্ত্রধারী, মাদক, সন্ত্রাসীদের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা হবে। শহরের গুরুত্বপুর্ণ স্থানে চেক পোষ্ট বসিয়ে তল্লাসী কার্যক্রম চলবে। খাগড়াছড়ির জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম শনিবার সন্ধ্যায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। জেলা প্রশাসকসহ এ কমিটি রবিবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে ময়না তদন্তের পর তিনটি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও অপর তিনটি লাশ নিতে এখনো কেউ আসেনি। ইউপিডিএফ(প্রসীত)গ্রুপ সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি সভাপতি তপন চাকমা, এল্টন চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুবফোরামের খাগড়াছড়ি জেলা সহ-সভাপতি পলাশ চাকমার লাশ খাগড়াছড়ি সদর থানায় রাখা হয়েছে। এদিকে পাহাড়ে বিবদমান পাহাড়ি সংগঠনগুলোর আধিপত্য বিস্তার লড়াই, চাঁদাবাজি, খুন-অপহরণ এখন নিত্য দিনের ঘটনা। এ লড়াইয়ে চলতি বছরে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৩২ জন। পাহাড়ে বিবদমান সংঘাতে ধারাবাহিক হত্যাকান্ডের ঘটনায় সচেতন মহল উদ্বেগ-উৎকন্ঠা প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী। এ নির্মম হত্যাকান্ডের গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, কয়েকশ সন্ত্রাসীর হাতে জেলার প্রায় ৬ লাখ মানুষ জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। এর অবসান হওয়া দরকার। পাহাড়ে চলমান সংঘাত-সংঘর্ষের অবসান ও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চায় এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ।