ফটিকছড়িতে জোটের প্রার্থী ভান্ডারীকে মেনে নিতে পারছেন না তৃণমুল আওয়ামীলীগ
ফটিকছড়ি প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) আসনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী তরিকত চেয়ারম্যান নজিবুল বশর ভান্ডারীর বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠন। দলীয় প্রার্থী নিশ্চিত না হওয়ায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে নেতা-কর্মীদের মাঝে। যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে এবারের নির্বাচনে এ আসন থেকে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে দফায় দফায় বৈঠক, কেন্দ্রে চিঠি লেখা, স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে দুই নেতার পক্ষে স্বাক্ষর সংগ্রহ সহ ব্যাপক কর্মসূচি পালন করছে তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী তরিকত ফেড়ারেশন চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে মনোনয়ন দেয় আওয়ামীলীগ। তখন প্রায় দলের ৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামীলীগ নেতা মাহমুদ হাসানকে পরাজিত করে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করায় সাময়িক বহিস্কার হয়েছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা মাহমুদ হাসান। পরে তিনি চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং অল্প দিনেই হৃদরোগ আক্রন্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। এদিকে আওয়ামীলীগ নেতা কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, ইউপি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীকে পুলিশ-বিজিবি দিয়ে নির্যাতন, আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতাকে অপমান করে বক্তব্য রাখা, আশানুরোপ উন্নয়ন না হওয়ায় ক্ষুদ্ধ তারা।
আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি আওয়ামীলীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বলেন, ফটিকছড়িতে বিগত সময়ে যে সমস্ত উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে তা তিনি এবং আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতা এবং সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের মাধ্যমে হয়েছে। ফটিকছড়ির উন্নয়নে অন্য দলের কোন কৃতিত্ব নাই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফটিকছড়িতে আওয়ামী রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ৫২ জন নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। তাদের হত্যার বিচার এখনো হয়নি। গত ৫ বছর যিনি এমপি ছিলেন নজিবুল বশর। তিনি উপজেলার আওয়ামী রাজনীতিকে ভেঙ্গে তছনছ করেছেন।
দৃঢ কন্ঠে পেয়ারুল ইসলাম বলেন, শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবো। কেন্দ্র থেকে তাঁকে মৌখিক ভাবে মাঠে প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, অপেক্ষা করেন শেষ বেলায় কেন্দ্র সিদ্ধান্ত পাল্টাবে। অপর দিকে আওয়ামীলীগ নেতা এটিএম পেয়ারুল ইসলামের সাথে সমঝোতা হয়েছে মর্মে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বিভিন্ন মিডিয়ায় বক্তব্য দিলেও তা সত্য নয় বলে দাবী করেন তিনি। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গত রোববার রির্টানিং কর্মকর্তার অফিস থেকে ফটিকছড়ি আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আজ বুধবার মনোনয়ন ফরম জমা দেবেন।
এ দিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরস্থ এটিএম পেয়ারুল ইসলামের বাসায় উপজেলা এবং জেলা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সমাগম ঘটে। পেয়ারুল ইসলামের বাসায় উপস্থিত সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের একটিই দাবী পেয়ারুল ইসলামকেই প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হউক। সেখানে জরুরী বৈঠক করেন দলটির সিনিয়র নেতারা। বৈঠক শেষে বুধবার ফটিকছড়িতে দলের জরুরী সভা আহবান করা হয়েছে। সেখান থেকে আরো কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানান উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী নাজিমুদ্দিন মুহুরী। উপজেলার নানুপুর ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ ওসমান গনি বাবু বলেন, আমরা দল থেকে প্রার্থী চাই। দলের বাইরে কাউকে শেষ পর্যন্ত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে রাখা হলে উপজেলা আওয়ামীলীগ ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিবে।
ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা দলীয় প্রার্থী চাই। দল থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় পার্লামেন্টারী বোর্ডকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি শেষ পর্যায়ে পরিবর্তন হবে। এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন তরিকত চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী। ইতোমধ্যে তাঁকে মনোনয়নের চিঠিও দেয়া হয়েছে। বিষয়টি কোন ভাবেই মানতে রাজি নন উপজেলার সিনিয়র এসব আওয়ামীলীগ নেতা। আবার উপজেলা তরিকত ফেডারেশনসহ আওয়ামীলীগের একাংশের নেতারা এটিকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে প্রচার করছে। তবে আওয়ামীলীগ নেতারা বলছেন চিঠি পাওয়া মানে চুড়ান্ত হওয়া নয়। যে কোন মুহুর্তে প্রার্থী পরিবর্তন হতে পারে।
এ দিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এটিএম পেয়ারুল ইসলামের বাসায় তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, উত্তর জেলা আওয়ামীলীগ নেতা, মো. শাহজাহান, চেয়ারম্যান সৈয়দ ওসমান গনি বাবু, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবুল হক চৌধুরী, সাধারন সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী, ফটিকছড়ি চেয়ারম্যান সমিতির সভাপতি এম এ কাইয়ুম, আওয়ামীলীগ নেতা স.ম বাকের, চেয়ারম্যান রুস্তম আলী, শাহ আলম সিকদার, আবদুচ ছালাম, আবু তালেব, মজিবুর রহমান স্বপন, চেয়ারম্যান আবদুল হালিম, আমানুল্লাহ লিটন, আবদুল মান্নান, যুবলীগ নেতা মাসুদুল ইসলাম মাসুদ, শহিদুল আলম শহীদ, বখতেয়ার সাঈদ ইরান, ছাত্রলীগ নেতা মো. রেজাউল করিম প্রমুখ।