রাঙ্গামাটির রাজবন বিহারে কঠিন চীবর দান উৎসব শুরু

শেয়ার করুন

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটি শহরের ঐতিহ্যবাহী রাজবন বিহারে শুরু হয়েছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব দানোত্তম কঠিন চীবর দান। ৩০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেলে বেইন ঘর ও চরকায় সূতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। এসময় পূর্ণ্যার্থীদের ‘সাধু সাধু’ ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজবন বিহার প্রাঙ্গণ।

দুই দিনব্যাপী এই উৎসবে আগামীকাল শুক্রবার সকালে প্রথম পর্বের ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে দ্বিতীয় পর্বে সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনায় সমবেত সুত্রপাঠ ও মঙ্গলাচারণ অনুষ্ঠিত হবে। পরে রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবীরসহ ভিক্ষু সংঘকে চীবর দানের মধ্য দিয়ে শনিবার এ উৎসবের সমাপ্তি হবে। এবারের আয়োজনটি রাজবন বিহারের ৪৯তম দানোত্তম কঠিন চীবর দান।

রাজবন বিহারের কার্যকরী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমীয় খীসা বলেন, “এবার প্রায় ৪ শতাধিক চরকা ও ২০০টি বেইন স্থাপন করা হয়েছে। হাজারো নারী-পুরুষ চীবর তৈরির কাজে যুক্ত হয়েছেন।” তিনি আরও জানান, উৎসব নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিরুপা দেওয়ান বলেন, “দেশের বাইরে থেকেও কয়েকজন বিদেশি পূর্ণ্যার্থী এবার অংশ নিয়েছেন। উৎসবের প্রাণবন্ত পরিবেশে সবাই ভক্তিভরে অংশ নিচ্ছেন।”

প্রসঙ্গত, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধেয় গেরুয়া বস্ত্রকে বলা হয় চীবর। এই চীবর তৈরির পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই। তুলা থেকে সূতা তৈরি, রং করা, আগুনে শুকানো এবং তাঁতে বোনা শেষে ভিক্ষুদের দান করা হয়। এই কঠিন প্রক্রিয়ার কারণেই এর নাম কঠিন চীবর দান।

বৌদ্ধ শাস্ত্র অনুযায়ী, আড়াই হাজার বছর আগে গৌতম বুদ্ধের উপাসিকা বিশাখা এই চীবর তৈরির প্রথা প্রবর্তন করেন। আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে কার্তিকী পূর্ণিমা পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে ভিক্ষুদের চীবর দান করার এই ঐতিহ্য এখনো বজায় রয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সাল থেকে রাজবন বিহারে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে এই উৎসব পালিত হচ্ছে।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, জগতে যত দান আছে, তার মধ্যে চীবর দানই সর্বোত্তম দান। এবারের চীবর দান চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় পার্বত্য ধর্মগুরু বনভান্তের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ভিক্ষু সংঘের নিকট উৎসর্গ করবেন। রাত শেষে রাজবন বিহারের আকাশে ফানুস উড়িয়ে শেষ হবে এই মহৎ দানোত্তম কঠিন চীবর দান উৎসব।