খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর: বদলি ঠেকাতে মরিয়া নির্বাহী প্রকৌশলী

স্টাফ রিপোর্টার: বদলির আদেশ ঠেকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. সোহরাব হোসেন। বদলির আদেশ পাওয়ার পরও তিনি নতুন পদায়নকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়নি। ফলে পদায়ন হলেও নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দিতে পারেনি প্রকৌশলী কামাল হোসেন। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন খাগড়াছড়ি ছাড়াও একই সাথে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কর্মরত রয়েছে। এই নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গড়িয়েছে।

এর আগে কামাল হোসেনকে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করা হয়। কিন্তু বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানে কামাল হোসেনের যোগদানপত্র গ্রহণ করেনি। একই পরিস্থিতি খাগড়াছড়িতেও সৃষ্টি হয়েছে । খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নতুন পদায়নকৃত যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় তিনি যোগদান করতে পারেনি। উল্টো খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে কামাল হোসেনের পদায়নের আদেশ বাতিল করার জন্য অনুরোধ জানান। ২৫ জুলাই খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ কতৃক স্থানীয় সরকার বিভাগ বরাবর প্রেরিত চিঠিতে দাবি করা হয়,‘ মো.সোহরবার হোসেন পার্বত্য জেলায় বিভাগীয় কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে দূরদর্শিতা ও আন্তরিকতার সমেত দক্ষতা রয়েছে। ’তাই পদায়নকৃত কর্মকর্তার( কামাল হোসেন) এর যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়নি।’

জানা যায়,‘চলতি বছরের ২১মে সহকারী প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেনকে বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন দিয়ে বদলি করা হয়। এবং বান্দরবান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সকল দায়িত্ব নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল হোসেনকে হস্তান্তর করার অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে ২৮ মে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অফিস আদেশে জারি করে বলেন,‘ নির্বারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর না করলে ১০ জুন এর মধ্যে অপরাহ্নের পর অব্যহতি প্রাপ্ত অর্থ্যা স্ট্যান্ট রিলিজ হবে। কিন্তু এর পরও বান্দরবানের নিবার্হী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) পালন করছে সোহবার হোসেন। কিন্ত বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নতুন পদায়নকৃত কামাল হোসেনের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় তিনি বান্দরবানের যোগ দিতে পারেনি। পরবর্তীতে ১১ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মো.খাইরুল ইসলাম মো.কামাল হোসেনকে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। একইদিন ( ১১ জুলাই) জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়,‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর না করলে ২৮ জুলাই অপরাহ্নের পর খাগড়াছড়ির নির্বাহী প্রকৌশলী (অ.দা) অব্যহতি প্রাপ্ত অর্থ্যা স্ট্যান্ট রিলিজ হিসেবে গন্য হবে। কিন্তু দুই জেলায় নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হিসেবে কর্মরত রয়েছে মো.সোহরাব হোসেন।

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী কামাল হোসেনের যোগদানপত্র গ্রহণ না করায় তিনি খাগড়াছড়িতেও যোগদান করতে পারেনি । অভিযোগ রয়েছে,মূলত সোহরাব হোসেনের কারসাজির কারণে বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে নতুন করে কেউ যোগ দিতে পারছে না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে নতুন পদায়নকৃত নির্বাহী প্রকৌশলী মো.কামাল হোসেন জানান,‘ বর্তমানে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী সোহরাব সাহেব খুব অভিজ্ঞ ,দূরদর্শিতা আছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের খুব এক্টিভসহ নানা কারণ দেখিয়ে আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করেনি। এসময় তিনি আরো বলেন,‘চাকরিজীবনে আমি এর আগে বান্দরবানের দুর্গম রুমা থানচিতে কাজ করেছি। দীর্ঘদিন কক্সবাজারের তিন উপজেলায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু পার্বত্য এলাকায় বিচক্ষণতার নাই এমন অজুহাতে আমার যোগদানপত্র গ্রহণ করা হয়নি। এসময় তিনি আরো দাবি করেন,‘সোরবার হোসেন ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে প্রশাসনকে প্রভাবিত করিয়ে এসব কাজ করিয়েছে।’ একই কারণে বান্দরবানে আমি যোগদান করতে পারেনি।’

এদিকে এই বিষয়ে জানার জন্য খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (অ.দা.) সোহরাব হোসেনকে ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পার্বত্য চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. জহীর উদ্দিন দেওয়ান জানান,‘জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদায়নকৃত প্রকৌশলীর যোগদানপত্র গ্রহণ করলে সমস্যা সৃষ্টি হত না। দুই জেলায় একই সমস্যা হওয়াকে প্রশ্নবোধক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সোহরাব হোসেন বর্তমানে দুই জেলায় একই দায়িত্ব পালন করছে এতে প্রশাসনিক কাজে অসুবিধা হচ্ছে। বিভাগের পক্ষ থেকে স্টেপ (পদক্ষেপ) নেয়া হচ্ছে কিন্ত জেলা পরিষদ ঝামেলা করছে বিধায় কার্যকর হচ্ছে না। তবে এই ব্যাপারে ডির্পাটমেন্ট এবং মিনিষ্ট্রি অনেক স্ট্রং, হয়তো এই ব্যাপারে তারা পদক্ষেপ নিবে। ’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর প্রধান প্রকৌশলী মো.সাইফুর রহমান জানান,‘একজন প্রকৌশলী দুই জেলায় দায়িত্ব পালন সম্ভব নয়। এতে উৃন্নয়ন কাজে বিঘœ হচ্ছে এবং বাস্তবে এই সম্ভব না। তবে এই বিষয়ে চুড়ান্ত নিবে মন্ত্রণালয়। আমাদের মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সাথে বসব এবং এই বিষয়ে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।

Read Previous

তিনটহরী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর মাঝে সোলার বাল্ব বিতরণ

Read Next

রামগড়ে ৪৩ বিজিবি’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত