জুম’র আগুনে পাহাড় পুড়ে ন্যাড়া, বন্যপ্রাণীরা আশ্রয়হীন
মহালছড়ি প্রতিনিধি: পাহাড় ন্যাড়া করে চলছে সনাতন পদ্ধতিতে জুম চাষ। ফলে গাছপালা, লতাগুল্মের সাথে উজাড় হচ্ছে বন্যপ্রাণী, কীট-পতঙ্গ ও পাখ-পাখালি। আগুন দিয়ে জমি পরিষ্কারের কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পরিবেশ। প্রতি বছর মার্চ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে জুম চাষের জন্য নির্বাচিত পাহাড়ে আগুন লাগায় পাহাড়িরা। দাবানলে পুড়ে ছাই হয়ে যায় পাহাড়ের পর পাহাড়। এরপর মাটি কুপিয়ে চাষের উপযোগী করা হয় । এমনভাবে যুগ যুগ ধরে চলে আসছে জুম পাহাড়ের জুম চাষ।
মহালছড়ি এলাকার ধুমনিঘাট ও পঙ্খীমুড়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জুম চাষের প্রস্তুতি হিসেবে বিশাল বিশাল পাহাড় আগুনে পুড়ে সাফ করে দেওয়া হয়েছে। ফায়ার লাইন ছাড়াই অপরিকল্পিতভাবে জুম চাষের জন্য পাহাড়ে অগ্নিসংযোগের কারণে এক পাহাড়ের আগুন অন্য পাহাড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, পাহাড়ের জুমচাষের আগুনের এই দাবানলে গাছপালা ধ্বংসের ফলে বন্যপ্রাণীরাও নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছেনা। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী । আগুনের লেলিহান শিখায় দগ্ধ হয়ে অত্র এলাকার অসংখ্য পাহাড় ন্যাড়া পাহাড়ে পরিণত হয়েছে। পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানেন না বেশিরভাগ জুমচাষীই। যদিও জীবন ও জীবিকার জন্য জুম চাষ অপরিহার্য।
সেখানকার স্থানীয়রা বলছেন, পাহাড়ে এভাবে চাষাবাদের ফলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছে বেশি। এতে পাহাড়ের ক্ষয় হয়, মাটি উর্বরতা হারায়। একদিকে মার্চ-এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাহাড়ে কোন ঝোপঝাড় না থাকায় ছোট ছোট ঝিরি ও ঝর্ণা শুকিয়ে প্রচুর পানির সংকট দেখা দেয়। অনেক কষ্ট করে যে পানি সংগ্রহ করা হয় সে পানি ব্যবহার করে ডায়রিয়া, টাইফয়েডসহ নানা পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। তাই বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসের শঙ্কায় থাকতে হয়। তবে, কৃষি বিভাগের দাবী, কৃষকদের আধুনিক পদ্ধতিতে জুম চাষে সচেতন করার পাশাপাশি জুমে বনজ ও ফলদ বাগান করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাহাড়ের জীব-বৈচিত্র্য রক্ষা ও পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ঠেকাতে জুম চাষীদের আধুনিক পদ্ধতির চাষে প্রশিক্ষিত করা ও সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে।
মহালছড়ি উপজেলা কৃষি বিভাগের মতে, প্রতি বছরের মত এবারও এ অঞ্চলে প্রায় ১৫/২০ হাজার একর পাহাড়ে জুম চাষীরা অগ্নিসংযোগ করে জুম চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে পাহাড়ে জুম চাষের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অপরিকল্পিতভাবে পাহাড়ে নির্বিচারে অগ্নিসংযোগ না করে পরিকল্পিতভাবে ফায়ার লাইন দিয়ে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে। অন্যথায় প্রকৃতির বিরুপ প্রভাবে শুধু এখানকার এলাকা নয়, পুরো পার্বত্যবাসীকে খেসারত দিতে হবে।