পাহাড়ে শান্তি কেন সুদূর পরাহত…
এম সাইফুল ইসলাম: প্রসঙ্গটা পার্বত্য চট্টগ্রাম সেটা পাঠকরা লেখার শিরোনাম বুঝতে পেরেছেন নিশ্চই? না বোঝার মতো কোন সমীকরণ নেই। হ্যাঁ আমি পাহাড়ী (পাহাড়ে জন্মগ্রহণসূত্রে), পার্বত্য বাঙ্গালী(বাংলাদেশের নাগরিকতার সূত্র)। তবে আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় আমি বাংলাদেশী।
আমার আজকের লেখাটা অাগের চেয়ে একটু আলাদা। পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বভাবতই দেশের গুরুত্বপূর্ন একটা স্পর্শকাতর অঞ্চল। এখানে মোটামুটি সব ধর্মের লোকই বসবাস করে। একটি বেসরকারী সংস্থার হিসেবমতে এখানে বাংলাভাষী পাহাড়ী ৫২% আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৪৮%। কিন্তু এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও বাংলাভাষী পাহাড়ী সকল ক্ষেত্রে নির্যাতিত, নিপীড়িত আর নিষ্পেষিত। এর কারন কি?
জাতিসংঘ স্বীকৃত মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর্জনে আত্নদানকারী দেশের গর্বিত সন্তানদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঞ্চিত করার সূদুর প্রসারী ঘৃন্যতম অধিকার হরণকারী হিসেবে আত্নপ্রকাশকারী, বাংলাভাষী (৫২%), পাহাড়ী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (৪৮%) পাহাড়ীদের গলার ফাঁস হিসেবে পরিচিত, পার্বত্য শান্তিচুক্তি নামে আখ্যায়িত, ০২ রা ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে সম্পাদিত এ চুক্তিটি পাহাড়ে আদৌ কেন শান্তি আনতে পারছেনা?
কিছু সংখ্যক বিপদগামী উপজাতীয় যারা প্রতিবেশী বন্ধু ভাবাপন্ন রাষ্ট্রের অর্থে (লালিত,পালিত), অস্ত্রে (প্রশিক্ষিত), তাদের অঙ্গুলি হেলনে পরিচালিত দেশ ও জাতির বৃহৎ স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ক্ষুদ্র ও গোত্রীয় সাম্প্রদায়িক সংকীর্ন চিন্তায় আচ্ছন্নকারী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, রাষ্ট্রদ্রোহী, সসস্ত্র বিদ্রোহী সন্ত্রাসী বাহিনী, উপজাতীয় সন্ত্রাসীদের গড ফাদার খুনি জ্যাতিরিন্দ্র বোদিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এর সশস্ত্র সংগঠন তথাকথিত -শান্তিবাহিনীর সন্ত্রাসী হায়েনারা শান্তিচুক্তি পূর্ববর্তী সমময়ে প্রায় ৪০ হাজার নিরীহ বাংলাদেশীদে বাংলাভাষী (৫২%) এবং অন্যভাষী (৪৮%) পাহাড়ী জনগোষ্ঠী হত্যাকারি, শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সব অস্ত্রশস্ত্র, সরঞ্জাম, গোলা বারুদ জমা দেয়নি। তারা লোক দেখানো অস্ত্র সমর্পনের নাটক করেছিলো।তাছাড়া বিশ্বের কোথাও বিদ্রোহীদের আত্নসমর্পনের পর সরকার কতৃক এত সুযোগ-সুবিধা প্রদান ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অংশীদার করা হয় নি।
১৯৯৭ সনের পার্বত্য চুক্তি প্রকাশ শান্তিচুক্তি। তৎকালীন সম্পাদিত চুক্তিতে পাহাড়ে বসবাসরত জনগোষ্ঠির পক্ষ হতে পার্বত্য জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) প্রকাশ শান্তি বাহিনীর সভাপতি, বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের অবৈধ চেয়ারম্যান জ্যাতিরিন্দ্র মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ওরফে খুনী সন্তু লারমা সরকারের সাথে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ঐ চুক্তি অনুযায়ী সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএস ওরফে শান্তি বাহিনী নামক গেরিলা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অস্ত্র সমর্পন করবে এবং সরকার তার বিনিময়ে তাদেরকে বেশকটি গুরুত্বপূর্ন সুবিধা দিবে মর্মে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে এমন চুক্তিভিত্তিক এতো রাষ্ট্রীয় সুবিধা দেবার নজির আর কোথাও নেই।
চুক্তি সম্পাদনের সময় জেএসএস সন্ত্রাসীদের গুটিকয়েক সদস্য তাদের ভাঙাচোরা অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসলেও তাদের মূল অংশটা আজো সন্ত্রাসের পথেই বিদ্যমান অপরদিকে চুক্তির প্রায় সব ধারাই বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। কিন্তু পাঠক একটু পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে নজর দিলেই দেখবেন চুক্তিবিরোধী ইউপিডিএফ এর সাথে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসও সমান পাল্লা দিয়ে পাহাড়ে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণ করেই যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
যেখানে চাঁদাবাজি,সন্ত্রাস বন্ধে চুক্তি করা হলো সেখানে এবার প্রশ্ন উঠতেই পারে পার্বত্য চুক্তির সফলতা কোথায়?
চুক্তি সম্পাদনকারী বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার তাদের বর্তমান সময়ে এসে সারাদেশে যেখানে সন্ত্রাস,চাঁদাবাজি, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছে সেখানে পাহাড়ে কেন নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে? কেন পাহাড়ে নিরাপত্তাবাহিনী সন্ত্রাসীদের কাছে অসহায়? কেন সারাদেশ দাফিয়ে বেড়ানো পুলিশ-বিজিবিকে পাহাড়ে সন্ত্রাসীদের হাতে মার খেতে হয়?
দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয়, হাইকোর্ট থেকে ২০১০ সালে অবৈধ ঘোষিত আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ার কিভাবে সন্তু লারমার মতো খুনী আজো দখলে রেখেছে? এখানে কি হাইকোর্টও সন্তুলারমার কাছে তুচ্ছ? প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি করলে যেখানে সারাদেশে আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ,যুবলীগ নেতারা যেভাবে সারাদেশে মামলার বন্যা বসিয়ে দেন, যখন সন্তু লারমা রাজধানী ঢাকায় বসে সরকার প্রধানকে অসহযোগ আন্দোলনে হুমকি দিলেন, পাহাড়ে আগুন জ্বলবে বলে হুশিয়ারি দিলেন কই সেভাবে তো সন্তু লারমার বিরুদ্ধে তারা কোন মামলা করলেন না, কিন্তু কেন?
অস্ত্রবাজি ছেড়ে স্বাভবিক জীবনে ফেরার অঙ্গীকার করেরে আজে অস্ত্রের ঝনঝনানি চালিয়ে যাবার অপরাধে সন্তু লারমার কি কোন বিচার হবেনা?
রাঙ্গামাটির মহিলা সাংসদ নুরজাহান চিনু ম্যামের কয়েকবার দাবি করা সন্তু লারমার জাতীয় পরিচয়পত্র আছে কি নেই সেটা কি প্রশাসন খতিয়ে দেখেছেন একবারও? নাকি আওয়ামীলীগ নেত্রী + এমপি চিনুর কথার কোন মূল্য নেই প্রশাসনের কাছে???
আসি চারদলীয় জোটের কথায়, চুক্তি পরবর্তিতে তৎকালীন বিরোধী দল এই চুক্তিকে কালো চুক্তি আখ্যা দিয়ে আন্দোলন, সংগ্রাম এমনকি লংমার্চও করলেন, খালেদা জিয়া ঘোষণা দিলেন তারা ক্ষমতায় আসলে চুক্তি বাতিল করবেন। চুক্তি বাতিল দূরের কথা কোন একটি ধারাও তারা সংশোধন করেন নি।
এভাবে যুগের পর যুগ অতিবাহিত হলেও কোনো সরকারই তাদের আমলে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। এখন সময় এসেছে পাহাড় নিয়ে একটু ভাববার। এই সবুজ পাহাড় যেনো আর রক্তেলাল না হয়। একটি লাশও পার্বত্যবাসী দেখতে চায় না। লেখক: সংবাদ কর্মী।