কাপ্তাইয়ে সাড়ে ৩ কোটি টাকার বাঁশ পরিবহনে চরম ভোগান্তি

শান্তি রঞ্জন চাকমা, কাপ্তাই: কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাল পারাপার প্রণালী কার্গো ১ নম্বর ও ৩ নম্বর ট্রলি যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে প্রায় একমাস ধরে বন্ধ রয়েছে। ২ নম্বর ট্রলি দিয়ে বাঁশ-গাছ পারাপার কোনমতে সচল রাখা হয়েছে। গত ৩/৪ মাস পূর্বে আহরিত প্রায় ৭ লক্ষ বাঁশ পরিবহন করতে না পারায় রোদে শুকিয়ে, পানিতে ভিজে গুনাগুন নষ্ট ও পচে যাচ্ছে। শতশত বাঁশ-গাছ ব্যবসায়ী প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার কাঁচামাল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছেন।

গাছ ব্যবসায়ী মো. মহিউদ্দিন বলেন, মাল পারাপার প্রণালি কার্গো যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে ১ ও ৩ নম্বর ট্রলি বন্ধ থাকায় পরিবহনে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। অন্তত দু’টি কার্গো চালু রাখা গেলে মালামাল পারাপারে সুবিধা হত। বাঁশ ব্যবসায়ী নূর হোসেন মাঝি বলেন, হ্রদের উপরে বিভিন্ন এলাকা থেকে সরকারী টিপির মাধ্যমে আহরিত লক্ষ লক্ষ বাঁশ হ্রদের পানিতে ভাঁসিয়ে কাপ্তাই কার্গো এলাকায় আনা হয়েছে। দীর্ঘ সারি সারি ভাবে চালি বেঁধে কার্গো থেকে জেডিঘাট পর্যন্ত বাঁশ বিস্তৃত রয়েছে। বাঁশ ব্যবসার সাথে জড়িত শতশত মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। সঠিক সময়ে বাঁশ পরিবহন করতে না পারলে ব্যবসায়ীরা লক্ষ লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হবে বলে জানান।

বাঁশ ব্যবসায়ী রেজাউল করিম লেদু বলেন, কার্গো ৩নম্বর ট্রলি প্রায় একমাস পূর্বে যান্ত্রিক ত্রুটি হলেও এখনো সচল হয়নি। কার্গোতে চাহিদা মোতাবেক মালামাল পারাপার না হওয়াতে দিনদিন দীর্ঘ হচ্ছে বাঁশের চালি। প্রতিদিন হাজার হাজার টন কাঁচামাল ও নৌযানবাহন কাপ্তাই কার্গো এলাকায় মজুত হচ্ছে। সময়মত বাঁশ পরিবহন করতে না পারলে কাঁচামালের গুনগতমান খারাপ হওয়ায় খরিদদাররা ক্রয়ে অনাগ্রহ প্রকাশ করে। ব্যবসায়ীরা জানান, ট্রলি মেরামত হচ্ছে বলে সময়ক্ষেপন করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল ও আন্তরিক হলে দ্রুত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। বোট চালক মো. মফিজ বলেন, কার্গোর নিয়োজিত ষ্টাফরা কাজে অমনযোগ ও দায়িত্বহীনতার কারনে মালামাল পারাপারে ধীরগতি হচ্ছে। সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দু’ই শিফট্ েকাজ শুরুর নিয়ম থাকলেও ইচ্ছেমাফিক চলছে কার্যক্রম।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাল পারাপার প্রণালী কার্গো ক্যাশিয়ার (তালি ক্লাক) আলমগীর চৌধুরী বলেন, কাপ্তাইয়ে কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি হয় ১৯৬০ সালে। কাপ্তাই বাঁধকে ঘিরে গড়ে উঠে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। তৎসময়ে বাঁধের দুই পাশে কর্ণফুলী নদী পারাপারে কার্গো ট্রলি নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে ভুগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ ৩টি ট্রলি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ১৯৮৬ সালে মাল পারাপার প্রণালী তিনটি কার্গোর মাধ্যমে পুরোদমে কার্যক্রম শুরু হয়।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাল পারাপার প্রণালী কার্গোর ফোরম্যান মোহাম্মদ কিবরিয়া বলেন, গত একমাস পূর্বে কার্গোর ৩ নম্বর ট্রলি যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে ৪টি বেয়ারিং ও শেফট নষ্ট হয়ে গেছে। ৩৩ বছর ধরে কার্গোর ট্রলি পুরনো যন্ত্রপাতি জোড়াতালি দিয়ে কোনমতে চলছে। অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে কার্গো দিয়ে মালামাল পারাপার করা হয়। নতুন ভাবে কার্গো স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রায় ৬২ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করেছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রানালয়ের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঝুঁকিপূর্ণ কাপ্তাই কার্গো এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাল পারাপার প্রণালী কার্গোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান বলেন, ১ ও ৩ নম্বর ট্রলি যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে মাল পারাপারে কিছুটা ধীরগতি হচ্ছে। ৩ নম্বর ট্রলি মেরামতের সবার্ত্রক চেষ্টা চলছে। সাধারন ব্যবসায়ীরা যাতে হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ রেখে কার্যক্রম চলছে।

Read Previous

কাউখালীতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ পালিত

Read Next

মানিকছড়িতে নির্বাচনী প্রচারনায় জেলা পরিষদ সদস্য জব্বার