মামুন হত্যার থানায় মামলা, সংঘর্ষ থামলেও কাটেনি এখনো আতঙ্ক

 মামুন হত্যার থানায় মামলা, সংঘর্ষ থামলেও কাটেনি এখনো আতঙ্ক
পাহাড়ের আলো: খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উপজেলায় সংঘর্ষের পর ঘরবাড়ি ও দোকানে আগুন দেওয়া হয়  ৭২ ঘণ্টার অবরোধের দ্বিতীয় দিনে খাগড়াছড়ির সঙ্গে অন্য জেলার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সংঘর্ষ বন্ধ হলেও চারদিকে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ হতে আয়োজন করা হয়েছে শান্তি সমাবেশ।
এদিকে মামুন হত্যাকাণ্ডে মামলা হয়েছে। মামলায় ৩ জনের নাম উল্লেখসহ আরও অজ্ঞাত নামা ১০/১২ পাহাড়ি ও বাঙালিকে আসামি করা হয়েছে। আসামীরা হলেন- মো. শাকিল (২৭), মো. রফিকুল আলম (৫৬) ও মো. দিদারুল আলম। নিহতের স্ত্রী মুক্তা আক্তার বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন মৃধা বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে মামলাটি দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

বাদী মুক্তা আক্তার এজাহারে অভিযোগ করেন, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে পূর্ব শত্রুতার জেরে তার স্বামী মো. মামুনকে অন্য আসামিদের নির্দেশে মো. শাকিল জোর পূর্বক তুলে নিয়ে যায়। পরে সকালে জানতে পারে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে।

গত শনিবার রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পরিদর্শনে আসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নেতৃত্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। উনারা একাধিক মতবিনিময় সভায় প্রশাসনকে সর্বোচ্চ কঠোর হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। অঙ্গীকার করেছেন দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।

এদিকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। একই সঙ্গে টহল দিচ্ছে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া ৭২ ঘণ্টা অবরোধের দ্বিতীয় দিন আজ রবিবার অভ্যন্তরীণ সড়কে তেমন কোনো গাড়ি চলাচল করতে দেখা যায়নি। তবে খাগড়াছড়ি শহরের প্রাণ কেন্দ্র শাপলা চত্বর, আদালত সড়ক, বাস টার্মিনাল, চেঙ্গি স্কয়ার, মধুপুর সড়কসহ আশপাশের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

দীঘিনালার কলেজ গেট এলাকার বাসিন্দা সুনয়ন চাকমা বলেন, ‘দীঘিনালায় আমরা আতঙ্কে আছি। রাতে পাহাড়ি এলাকায় কী হচ্ছে, বা প্রকৃত ঘটনা কী ঘটছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।’

দীঘিনালার লারমা স্কয়ার এলাকা সংলগ্ন বোয়ালখালী বাজারের ব্যবসায়ী শরীফ হোসেন বলেন, ‘আমরা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।’ কেন আতঙ্কে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন এলাকায় হানা দিচ্ছে, স্থানীয়দের মারধর করছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তারা। এ জন্যই আতঙ্কে আছি। তারা পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সভাপতি মো. লোকমান হোসেন বলেন, এসব ঘটনার জন্য পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়ী। চোর সন্দেহে মামুনের হাত পা বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করেছে পাহাড়ি কয়েকজন যুবক।

জেলার বাঙালি পরিষদের নেতা আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের মেরে ফেললে আমরা প্রতিবাদও করতে পারব না। এ কোন সমাজে বসবাস করছি? পাহাড়িরা একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে যাবে আর আমরা বসে বসে খেলা দেখব।’

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) খাগড়াছড়ি জেলার মুখপাত্র নিরন চাকমা বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।’

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, পরিবহন শ্রমিক, সাধারণ যাত্রীদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় অতীতেও বিএনপি কাজ করেছে। ভবিষ্যতেও কাজ করবে। পাহাড়ি বাঙালি ঐক্য ও একসাথে মিলেমিশে বসবাস করাই বিএনপির মূল আদর্শ।

খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করছি। শান্তির জন্য পক্ষপাতমুক্ত থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে সবার কাজ করা উচিত।

গত বুধবার খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্র করে গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক বাঙালি যুবকের মৃত্যু হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে এ হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়।

পাহাড়ের আলো

https://pahareralo.com

সর্বাধিক জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল। সর্বশেষ সংবাদ সবার আগে জানতে চোখ রাখুন পাহাড়ের আলোতে।

Related post

Leave a Reply